স্বদেশ ডেস্ক:
দীর্ঘ প্রায় একযুগ ধরে ইসরায়েলের ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আভাস পাচ্ছেন- ক্ষমতা হারানোর। তাই ক্ষমতা ধরে রাখতে বিরোধী দলের প্রস্তাবিত জোট সরকার ঠেকাতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন তিনি। আজ সোমবার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছ যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়- নেতানিয়াহু বলেছেন, প্রস্তাবিত এই জোট সরকার ইসরায়েলের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তাই এ চুক্তিতে সমর্থন না দিতে এবং প্রস্তাবিত নতুন জোট সরকারে যোগ না দিতে ইসরায়েলের ডানপন্থী রাজনীতিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। তিনি এমন সময় এই আহ্বান জানালেন যখন তার সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরাতে বিরোধী দলগুলো চুক্তির দ্বারপ্রান্তে।
দেশটির ডানপন্থী রাজনীতিকদের উদ্দেশ করে গতকাল রোববার নেতানিয়াহু বলেন, ‘বামপন্থী সরকার গঠন করবেন না। এ ধরনের সরকার ইসরায়েলের নিরাপত্তা ও ভবিষ্যতের জন্য একটি বিপদ।’
ইসরায়েলের মধ্যপন্থী দল ইয়েস আতিদের নেতা ইয়ার লিপিদ জোট সরকার গঠনের লক্ষ্যে উগ্র জাতীয়তাবাদী নেতা নাফতালি বেনেতের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করতে চলেছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি। গতকাল এ চুক্তির পক্ষে অবস্থান জানিয়েছে বেনেতের দল, যাদের ছয়টি আসন ইসরায়েলে জোট সরকার গঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
এর আগে গত মার্চে অনুষ্ঠিত ইসরায়েলের জাতীয় নির্বাচনে আসনের দিক দিয়ে নেতানিয়াহুর ডানপন্থী দল লিকুদ পার্টির পরেই রয়েছে লাপিদের দল ইয়েস আতিদ। লাপিদকে সরকার গঠনের জন্য ২৮ দিন সময় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের ১১ দিনের হামলায় ওই প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হয়। ওই হামলার জেরে লাপিদের জোট শরিক হওয়ার দৌড়ে থাকা আরব ইসলামিস্ট ইউনাইটেড আরব লিস্ট আলোচনা থেকে বেরিয়ে যায়।
এখন জোট সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আসন জোগাড়ে লাপিদের হাতে আছে আর মাত্র দুদিন। শেষ সময়ে এসে উগ্র জাতীয়তাবাদী বেনেতের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হচ্ছেন তিনি। সম্ভাব্য এই চুক্তি অনুযায়ী ১২০ আসনের ইসরায়েলি পার্লামেন্টে মাত্র ছয় আসন নিয়েই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন নাফতালি বেনেত।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, উভয় পক্ষ যে চুক্তিতে সম্মত হয়েছে, সেখানে আগামী দুই বছরের জন্য বেনেট ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন। এরপর মেয়াদের বাকি দুই বছরের জন্য প্রধানমন্ত্রী হবেন ইয়ার লাপিড।
বিবিসির ওই প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, এক যুগ ধরে ক্ষমতায় থাকা নেতানিয়াহুর বিরোধীদের মধ্যে রাজনৈতিক মতাদর্শের মিল খুব সামান্য হলেও একটি জায়গায় তারা সবাই মিলেছেন। প্রত্যেকেই নেতানিয়াহুর শাসনের অবসান চাইছেন। গত শনিবার রাতে নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টি বেনেত ও অন্যান্য দলের নেতাদের ক্ষমতা ভাগাভাগির প্রস্তাব দেয়। তিন দফায় প্রধানমন্ত্রিত্ব ভাগ করে নেওয়ার প্রস্তাব দেয় তারা। কিন্তু সেই প্রস্তাবে আর সাড়া মেলেনি।
নতুন জোট সরকার গঠনের জন্য লাপিদের হাতে আগামী বুধবার পর্যন্ত সময় আছে। যদি তিনি নতুন জোট সরকার গঠন করতে সক্ষম হন, তাহলে ইসরায়েলে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সবচেয়ে দীর্ঘ শাসনের অবসান ঘটবে।